আগে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গরু ব্যবসায়ীরা এসে গরু কিনে নিয়ে যেত। কিন্তু এবার বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা এখনও আসেনি। ফলে হাটবাজারগুলোতে ক্রেতা নেই বললেই চলে। অন্যান্য বছর বাজারগুলোতে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ক্রেতারা গরু কিনতেন। ক্রেতা না থাকায় এবার করুন পরিস্থিতি বলছেন বিক্রেতারা।
ঈদের হাটে গরু বিক্রির আশায় বসে থাকা খামারি ও গরু ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। ভালো দাম পাওয়ার আশায় খামারিরা গরু-ছাগল পরিচর্যা করেন। ক্রেতা কম থাকায় ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। কম দামে গরু বিক্রি করলে আসল পুঁজিও উঠবে না খামারিদের।
জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৭ হাজার ৯৮০ জন খামারির তালিকাভুক্ত পশুর সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার। এর মধ্যে ২৯ হাজার ৭৪টি গরু, ১৬ হাজার ৩৪টি ছাগল-ভেড়া তালিকাভুক্ত। এছাড়াও জেলায় কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সৌখিন পরিবারের প্রায় আরও ২০ হাজার পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
সরেজমিন বোদা উপজেলার নগরকুমারী হাটে গিয়ে দেখা যায়, গরুর আমদানির তুলনায় ক্রেতা কম। গতবছর যে গরুর দাম ৩০-৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল এবার সেরকম গরু ২০-২৫ হাজার টাকা বলছেন ক্রেতারা। হাটে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা মূল্যের ষাঁড় উঠেছে। তবে ক্রেতারা দাম বলেছে ৯০ হাজার। অধিকাংশ মানুষেরই মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। নেই জীবাণুনাশক স্প্রের ব্যবস্থাও।
জেলার বোদা উপজেলার কুড়ালিপাড়া এলাকার খামারি হকিকুল ইসলাম ও আব্দুল করিম বলেন, ওষুধ কীটনাশকে নয় প্রাকৃতিক উপায়ে খড়-ঘাস, খৈল, ভূষি ভাতের মাড় খাইয়ে গরুগুলোকে বিক্রি উপযোগী করা হয়েছে। একদিকে করোনা পরিস্থিতি, গরুর ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজের কারণে আমরা বেকায়দায় পড়েছি। অন্যদিকে গরুর খাবারের দাম বেশি, বন্যার কারণে গো খাদ্যের সংকট। তার ওপর হাটবাজারে গরুর ব্যবসায়ীরা না আসায় গরুর দাম কমেছে। এ কারণে আমরা গরু বিক্রি করতে পারিনি।
আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের সাতথামার গ্রামের গরুর খামারি নুর আলম পুলক জানান, ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজের কারণে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। কোনো গরু আক্রান্ত হলে ন্যূনতম ২০ দিন সেবা করতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে।
জেলার বোদা উপজেলার প্রামাণিকপাড়া এলাকার অমিয় আলম অমি জানান, বন্যার কারণে এমনিতেই গো খাদ্যের সংকট। গরু পরিচর্যায় অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। বাজারে যে দাম বলছে তাতে গরু বিক্রি করলে আসল তো দুরের কথা খরচের টাকাও উঠবে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের খামার বন্ধ হয়ে যাবে।
হাটে গরু কিনতে আসা খতিবুর রহমান বলেন, ‘করোনা, ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজসহ নানা কারণে এখনও গরুর বাজার জমে উঠেনি। ক্রেতাদের সমাগমও কম। ঈদ ঘনিয়ে আসলে বাজার জমে উঠতে পারে।’
বোদা নগরকুমারী হাটের ইজারাদার আব্দুর রহমান জানান, আমদানি মোটামুটি হলেও করোনাভাইরাস ও গরুর ডিজিজের কারণে গরুর হাটে ক্রেতা কম। এছাড়া এবার এখনও বাইরের গরু ব্যবসায়ীরা আসেনি।
পঞ্চগড় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আসন্ন কোরবানির জন্য জেলায় ৪৬ হাজার পশু চাহিদা রয়েছে। এখানে চাহিদার কোনো ঘাটতি হবে না। করোনার কারণে এবার কোরবানির পশু বিক্রির বিষয়টি মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ওপরও অনেকাংশে নির্ভর করবে।’